সুইটি এমনিতে ইংলিশ মিডিয়ামেই পড়ে, তবু রঞ্জার যেন আজকাল তাকে ইংরেজি শেখানো থেকে ফুরসতই হচ্ছে না। আসলে, দুবছর বাদে আমেরিকা থেকে দিদি, জামাইবাবু আর অ্যাশ আসছে বলে কথা। সুইটিকে তাই শিখিয়ে পড়িয়ে তুখোড় করা চাই ইংলিশে। নয়তো দিদিদের কাছে মান থাকবে না যে!
অনেক গল্প শুনে, অনেক স্বপ্ন নিয়ে ঐশ্বর্য ভারতে এসেছে মা, বাবার সঙ্গে। কিন্তু এসে থেকেই কেবলই আশাহত হচ্ছে। সবাই সেই বিদেশি বন্ধুদের মতোই "অ্যাশ" বলেই ডাকছে তাকে। তার মায়ের দেওয়া এত সুন্দর নাম, যার অর্থ "বৈভব", তা কিনা সবার পাল্লায় পড়ে "ছাই"য়ে পরিণত হলো শেষে নিজের দেশেও, এই বাংলায়! বিদেশে মা, বাবা ছাড়া কারো সঙ্গেই প্রায় বাংলা বলার সুযোগ পায়না সে, তাই ভেবেছিল মামাবাড়ি এসে সবার সঙ্গে প্রাণ খুলে বাংলায় কথা বলবে; কিন্তু দাদু, দিদা ছাড়া তো তার সাথে কেউ বাংলায় কথাই বলছেই না!
আজ দাদুর সাথে তাঁদের পাড়ার পুরোনো ক্লাবে গিয়ে মন খুব ভালো হয়ে গেল ঐশ্বর্যর। সে হইহই করে এসে সকলকে জানাল, আগামীকাল ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে সে সব বিভাগেই নাম দিয়েছে। সে তার প্রায় সমবয়সী সুইটিকেও জোর করল, তার সাথে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। কিন্তু সুইটি বেচারি না জানে কোনো রবীন্দ্রসঙ্গীত, না রবীন্দ্রনৃত্য বা লোকনৃত্য, না জানে কোনো বাংলা আবৃত্তি। তার মা-বাবা তাকে, ওয়েস্টার্ন ডান্স, ইংলিশ পোয়েম, এসবই শিখিয়েছে।
আজ ঐশ্বর্যর গান, নাচ, আবৃত্তি এবং সর্বোপরি ভাষা দিবস বিষয়ে স্বরচিত লেখা পাঠে যত না মুগ্ধ হয়েছে পাড়ার সবাই, তার থেকেও বেশি গর্ব হয়েছে তার মা, বাবা, দাদু, দিদার। বিদেশে থেকেও সে নিজের দেশকে তথা এই বাংলাকে সসম্মানে মন থেকে ভালোবেসে, ঐশ্বর্যর মতোই বহন করেছে তা, তার অন্তরে। তাই সে আজ এই পরিবারেরও যথাযথ ঐশ্বর্য হয়েই উঠেছে সর্বতোভাবে।
আসলে দাদুর বলা একটা কথা যে সেই কবেই তার আত্মায় মিশে গেছে, যা সে আজও পরম যত্নে, পরম শ্রদ্ধায়-ভালোবাসায় বহন করে চলেছে সগর্বে। দাদু তাকে শিখিয়েছিল, সব দেশেরই আলাদা আলাদা সংস্কৃতি আছে, তার অবশ্যই কিছু ভালো দিকও আছে, সেইসব ভালো যা কিছু সাদরে গ্রহণ করবে, কিন্তু নিজের দেশের শিকড়কে ভুলবে না, নিজের দেশের সংস্কৃতিকে আত্মায় বহন করবে আজীবন, তবেই তুমি সবার মাঝে সম্মানিত হবে, তোমার নামের প্রকৃত অর্থকে তুলে ধরতে পারবে সর্বসমক্ষে।
-সুমিতা চৌধুরী