Image-Description
Stories
জোড়া রামধনু
Sep 9 2023 Posted by : montajpublishing

কথাটা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেনা টুকটুক। রাতে স্বপ্নে ও একটা দস্তানা আর একটা মোজা পেয়েছে সান্তাক্লসের থেকে। খোদ বুড়োরই জিনিসগুলো। এই গরমে ওই লাল কম্বলের জামাকাপড় পরে গায়ে ঘামাচি-টামাচি হয়ে বেচারার কী হাল! কিন্তু তাও, ডিসিপ্লিন...যার যা ইউনিফর্ম, পরতে তো হয়ই। শনিবারও টুকটুকদের মত ছুটি নেই। স্বপ্নে ঘাম মুছতে মুছতে এসে বলল 'এই নাও টুকটুক, জোড়াগুলো খুঁজে পেলে যে উইশ চাইবে, তাইই দেব...'

টিংটং' টিংটং টিংটং...

শেষেরগুলো ডোরবেল ছিল।উঁকি দিয়ে দেখল সাজিদ আঙ্কল এসেছে। এইবার মা আসবে টুকটুককে ঘুম থেকে তুলতে। টুকটুক তাড়াতাড়ি বালিশের নীচে হাত দিল...একি!!! সত্যি তো একটা ধবধবে সাদা দস্তানা আর একটা মোজা। তাড়াতাড়ি ওগুলো নিজের তোষকের নীচে গুঁজে দেয় টুকটুক। মায়ের আসতে দেরি হচ্ছে। তার মানে সাজিদ আঙ্কল মা-কে কিছু বলছে... 

ইচ্ছে তো একটা আছে। কিন্তু আরেকপাটি করে মোজা আর দস্তানা সান্তা আর কাকে দিতে পারে! কোথায় খুঁজতে যাবে ও?! এইসব সাতপাঁচ ভাবছে, দেখে মা হাজির ―

― তুই আবার রেহানের সাথে ঝগড়া করেছিস?

― ও কেন বলল এ বছর আকাশে রেইনবো হবে না?

― মেঘ না হলে, বৃষ্টি না হলে তো রেইনবো হয়না টুকটুক। বোধহয় এবছর এত গরম বলে ও এমন বলেছে। কোথায় বৃষ্টি? তুইই বল।

― আমি খেলব না ওর সাথে। পাজি ছেলে, সেবার বলল আমার বার্থডেতে বৃষ্টি হবে। আর রাস্তায় জল জমে গেল। এবারও আর রেইনবো হবেনা। দেখো।'

– কিন্তু আজ বিকেলে যে রেহানের বার্থডে পার্টি। সাজিদ আঙ্কল ইনভাইট করে গেলেন।  যাবি না? এই দেখ, রেহানা আন্টির কল, বোধহয় রেহান সরি বলবে। নে, কথা বল।'

ফোনটা ধরেই একটু থতমত খায় টুকটুক। ঘুম থেকে উঠে মা নিজে মোবাইল ধরিয়ে দিচ্ছে এটা তার ছোট্ট জীবনে কতবার হয়েছে মনে করার চেষ্টা করে। ওদিকে রেহানা আন্টির 'গুড মর্নিং' -এর উত্তরে 'গুড মর্নিং' বললে আন্টি বলেন 'আবার রেহান দুষ্টুমি করেছে, তাই না টুকটুক? আমি ওকে বকে দিয়েছি। এই নাও কথা বলো।' 

― তুই সরি না বললে আমি কিন্তু যাবনা রেহান।

― ঘন্টা সরি বলব।

― আড়ি আড়ি আড়ি।

― আচ্ছা বাবা। সরি।

― লাস্ট টাইম কিন্তু।

― পাক্কা। শোননা একটু ব্যালকনিতে আয়...একটা কথা বলার আছে। কাল রাতে না আমার স্বপ্নে সান্তা ক্লজ এসেছিল। আমাকে একটা , না না, দুটো দারুণ জিনিস দিয়েছে...'

তারপর দুজনেই প্রায় একসাথে বলল 'সান্তার একপাটি মোজা আর দস্তানা... '

এরপরই দুদ্দাড় ছুট লাগালো দুজনে গ্রাউন্ডের দিকে। 

*****************

গ্রাউন্ড ফাঁকা। তীব্র রোদ্দুরে কমপ্লেক্সের সমবয়সী সবাই ঘরের ভেতরে কার্টুন দেখছে বা গেম খেলছে। বকুলগাছের নীচে শুধু গালে হাত দিয়ে বসে টুকটুক আর রেহান। 

― কী উইশ করবি?

― আমি কেন করব? তুই বার্থডে বয়, তুইই কর।

― কিন্তু সান্তা নিশ্চয়ই চায়নি আমি একা উইশ করি। তাহলে কী তোকে আর আমাকে হাফ হাফ করে দিত এগুলো?

― চল মিলিজুলি উইশ করি।

― তোর উইশ আর আমার উইশ না মিললে?

― উইশ তো বলাও যাবেনা... তাই না...যে মিলিয়ে নেব।

― হুমমম...এই টুকটুক, চল, উইশটা এঁকে এখানে রেখে যাই। সান্তা বুঝে নিয়ে নেবে ঠিক।

― ঠিক আছে, আমি আঁকতে যাচ্ছি। তুইও যা। বিকেলে দেখা হবে। আমি না আসি অবধি কেক কাটবি তো আবার আড়ি।

**************

দুপুরে খেতে বসতে না বসতে আকাশ অন্ধকার, সেই সঙ্গে টুকটুকের মুখও। রেহানের বার্থডে পার্টি এভাবে ভেস্তে গেলে ও খুব কাঁদবে। এই সব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে উইশটা আঁকতে বসল টুকটুক। তারপর আঁকতে আঁকতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে জানেনা। 

ঘুম ভাঙল মায়ের ডাকে, 

― একটা দারুণ জিনিস দেখবি আয়...

চোখ কচলাতে কচলাতে বারান্দায় আসে টুকটুক। আকাশের দিকে মায়ের আঙুলের দিকে তাকায় ― কালো মেঘ কেটে গেছে, বিকেলের সূর্য লজ্জা লজ্জা মুখ করে টুকি দিচ্ছে, আরে...ওগুলো কী? টুকটুক ছুটে ঘরে এসে ফোন করে, 'আন্টি, রেহানকে ফোনটা দাও। রেহান তুইও রেইনবো এঁকেছিস? পাজি, ব্যালকনিতে আয়।'

দুই খুদে ব্যালকনিতে এসে অবাক বিস্ময়ে দেখে সাতরঙের একটা রামধনুর উপরে আরেকটা রামধনু। অন্যান্য ব্যালকনিতেও লোকজন কথা বলছেন জোড়া রামধনু নিয়ে। তাদের সবার গলা ছাপিয়ে টুকটুকের রিনরিনে গলা পাওয়া যায় 'জন্মদিনের অনেক অনেক উইশ আর এই ডাবল রেইনবোটা তোর রেহান।'

***********

মজার কথা সেদিন বার্থডে পার্টির পর টুকটুক আর রেহান দুজনের কাছ থেকেই সাদা মোজা আর দস্তানা জোড়া একদম উবে গেছিল।

-মুম্মা মিত্র


Popular Books


Comments

  • Salil Hore

    দারুণ লাগলো। ছোট্ট একটা মিষ্টি গল্প।

    Sep 9 2023
  • Amrita Biswas Sarkar

    Khub misti sundor ekta golpo. Khub bhalo laglo ❤️

    Sep 12 2023
  • ইন্দিরা

    খুব ভালো হয়েছে ????????

    Sep 20 2023
  • cLKNiXhUwGqIrWJ

    kQKrUAdP

    Jan 29 2024
  • cLKNiXhUwGqIrWJ

    kQKrUAdP

    Jan 29 2024
  • cLKNiXhUwGqIrWJ

    kQKrUAdP

    Jan 29 2024

Write a Comment