Image-Description
Stories
লাগল যে দোল
Mar 4 2024 Posted by : montajpublishing

ইটু আর পাটু, ওরফে ইট-পাটকেল দুই যমজ ভাই।  ওদের জন্মানোর খবর পেয়েই ছোটকা, আহ্লাদে গদগদ হয়ে, যেই না ওদের এই নামে ডেকেছে সঙ্গে সঙ্গে সব্বাই সানন্দে এই নাম দুটোই লুফে নিয়েছে। তাতে অবশ্য ওদের কিচ্ছুটি এসে যায়নি, শুধু মাঝে মাঝে পাড়ার লোকেরা বুঝে উঠতে পারে না কোনটা কে! সেটায় যদিও ওদের নিজেদেরই বেজায় সুবিধে। পাড়ার লোক স্রেফ অকারণেই ওদের নামে নালিশ করতে এসে, কার নামে নালিশটা করবে বুঝতে না পেরে ফিরে যায়।
এমনিতে ছেলে হিসেবে ইটু, পাটু বেশ ভালোই, অনেক চেষ্টা করেও ওরা নিজেদের কোনও দোষ, খুঁজে পায় না, তবে  সবাই তো আর সমান নয়! পৃথিবীতে যেখানে যা-ই ঘটুক না কেন, সবার আগে  সব সন্দেহ, কেন যেন ওদের উপরেই এসে পড়ে।
'দেখে দেখে পিথ্থিবির উপরে ঘেন্না ধরে গেল।'
হি-হি, এই কথাটা পিসি ঠাম্মার কাছে শুনে শুনে ওদের এখন মুখস্থ। কার বাড়ির জানলার কাচ ফাটলো, কার বাগানে ফুলগাছের ডাল মচকাল, সব নাকি ওরাই করে! কেন রে বাপু, পাড়ায় বুঝি আর অন্য ছেলেপুলেরা নেই!
তবে এবারে ব্যাপারটা একটু ঘোরতর হয়ে দাঁড়াল। আজ দুপুরে ঠাম্মার কাচের বয়াম থেকে কারা যেন নারকেল নাড়ু সরিয়েছে। দোলের দিন রঙ দিয়ে পেন্নাম করলেই যাতে হাতে হাতে দেওয়া যায় তাই ঠাম্মা বানিয়ে রেখেছিল। এখন সে বয়াম অর্ধেক খালি। বাইরে থেকে তো আর কেউ আসেনি! ব্যাস, কানমলা তো জুটলই, সঙ্গে সঙ্গে ফরমান জারি হল, এবারে ইটু-পাটুর দোল খেলা বন্ধ!
কেন?
কারণ, ঠাম্মার ধারণা, পৃথিবীর কোনও দেশে কেউ কখনো বাঁদরদের দোল খেলতে দেখেনি!
হয়ে গেল! ইস্, কত কিছু প্ল্যান করা ছিল। কবে থেকে ওরা ভেবে রেখেছিল, ওদের বাড়ির ঠিক পিছনের গোয়ালাপট্টির ওই সাদা রামছাগলটাকে লাল রঙে রাঙিয়ে দিয়ে দেখবে, ওটা পরদিন লাল দুধ দেয় কিনা! আর গয়লাদের বস্তিতে, দেশ থেকে নতুন আসা, অচেনা অথচ চোখাচোখি হলেই বক দেখানো ছেলেটাকে ধরে আচ্ছা করে রগড়ান, তারপর ওইদিকে মাঠপারের নিরিবিলি দোতলা বাড়িটার বারান্দায় বসা আপনমনে বকবক করা,  পুটপুট নামের একলা ছেলেটাকে ডেকে এনে একটু আবির মাখিয়ে ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতানো...এইসব আর কী! যদিও অশোক বনের চেড়ির মতো, পুটপুটের আয়া মাসিটার নজর এড়িয়ে এইসব করা  খুবই মুশকিল, তবুও কে না জানে দুঃসাহসিক কাজ করার মতো 'ক্যান্ডাভ্যারিয়াস' আনন্দ আর কিসে!
'ক্যান্ডাভ্যারিয়াস' শব্দটার এমনিতে কোনো মানে নেই, এটা ওদেরই আবিষ্কার। তবে একদিন হয়তো ডিকশনারিওয়ালারাও ওই শব্দটাই চেয়ে বসবে।  সেদিন দেখো! আজ যারা কথায় কথায় কানমলা দেয়, তারাও কেমন মালা আর ক্যাডবেরি নিয়ে পিছুপিছু ছুটে আসে! সেদিন থোড়াই ইটু-পাটু, তাদের পাত্তা দেবে!
       ছোটকা অফিস থেকে ফিরে এসে, সব শুনে বলল "বেশ হয়েছে, আমার ছাদবাগানের কুঁড়িওয়ালা গোলাপের ডাল, কাদের ক্রিকেট ব্যাটের বাড়ি খেয়ে ভেঙেছিল, বুঝিনি ভেবেছিস!"
হায় রে! ছোটকাও! যে কিনা সবসময় বিপদে আপদে ওদের পাশে থাকে সে-ও শেষে এই! 
বিকেলে, ছাদে দাঁড়িয়ে ইটু-পাটু দেখছিল ওদের বাড়ির পিছন দিকের গোয়ালা বস্তিতে গাদাগুচ্ছের কাঠকুটো জড়ো করে ন্যাড়াপোড়ার জন্য তৈরী হচ্ছে সবাই। ইস্, গতবছরও ওরা ছোটকাদের ক্লাবের মাঠে ন্যাড়াপোড়া দেখতে গিয়েছিল। সবাই কেমন সুর করে গাইছিল―
'আজ আমাদের ন্যাড়াপোড়া,
কাল আমাদের দোল,
পুন্নিমাতে চাঁদ উঠেছে
বলো হরিবোল...'
একবছর হয়ে গেছে, বেজায় ভালো গানটা এখনও মনে আছে। অবশ্য  মনে রেখেই বা কী লাভ, এই বছর তো আর সে সব কিছুই হবে না। অশোকবনের সীতা দেবীর মতো ওরাও যে বন্দী।
ওদিকে গয়লাদের ফিচেল ছেলেটা, আড়ালে দাঁড়িয়ে ক্রমাগত ওদের বক দেখাচ্ছিল। অন্যসময় হলে আচ্ছা করে করিয়ে একখানা গাট্টা দিয়ে সমঝে দেওয়া যেত, ভাবতে ভাবতে দাঁত কিড়মিড় করে দীর্ঘশ্বাস পড়ো পড়ো হচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে ছোটকা এসে বলল ―
"কাল সক্কালবেলা, মা-কে তাঁর গুরুদেবের আশ্রম দর্শন করাতে নিয়ে যাচ্ছি। কাকভোরে রওনা হব।
আমাদের বাগানের পিছনের গেটের আংটাটাও কেমন করে যেন খুলে গেছে। কে-ই বা সারায়!!
ওদিকে গোয়ালারা, ওদের রামছাগলটাকে আজকাল আমাদের পাঁচিলের পাশেই বাঁধছে দেখে এলাম। ওহ্হো দু:খের কথা আর কী বলি, এবারে আমাদের বাড়ি দোলখেলা খেলা হবে না জেনেও রঙওয়ালারা, গাদাগুচ্ছের আবীর, বেলুন, বন্দুক, পিচকারি, আরও কী সব যাচ্ছেতাই ধরনের টুপিভর্তি একখানা পেল্লায় থলে আমার হাতে ধরিয়ে দিলে। বাধ্য হয়েই সেগুলো আমার ঘরে এনে রাখতে হল। কাল সকালের আগে কেউ যেন তাতে হাত না দেয়।
আরেকটা খবর পেলাম ও বাড়ির পুটপুটের বাবাও  অনেক টুপি আর আবীর কিনেছেন, তিনিও দোল খেলতে ভয়ঙ্কর ভালবাসেন কিনা, ওদিকে আয়ামাসিরও ছুটি।
         যাই বাবা, এসব কথা কাদেরই বা বলা! এ বাড়িতে তো এবারে দোলখেলা নেই।
ওই যাহ্ আরও একটা কথা। মোবাইলে দেখলাম কে যেন জানতে চেয়েছেন, বাঁদর যদি রঙ না-ই খেলে,তাহলে বাঁদুরে-রঙ শব্দটির ব্যূৎপত্তিগত অর্থ কী? তোদের ঠাম্মা তো বলতে পারল না, তোরা জানিস নাকি কিছু? ওদিকে তিনি তো আবার বেজায় ভাবনায় পড়েছেন, বাঁদুরে রঙ ঝোলায় পুরে 'দুনিয়ার বাঁদর এক হও!'  শ্লোগানসহ মিছিল টিছিল বের হলেই তো চিত্তির! তার চাইতে বাবা সব নিষেধাজ্ঞা তুলে ফেলাই ভালো।
আরে!! ওই দেখো, কেবলই ভুলে যাচ্ছি, তোদের ঠাম্মা নাকি হাঁড়ি ভর্তি করে মালপোয়া বানিয়ে রেখে যাচ্ছে, দোল খেলে এসে বাঁদরদের যদি খিদে পায়!"

নাহ, কাল পুটপুটের সঙ্গে তো বটেই, গোয়ালাদের ওই বজ্জাত ছেলেটার সঙ্গেও ভাব করে নিতে হবে। এবারের দোলটা জমে যাবে মনে হচ্ছে!

-সুমিতা দাশগুপ্ত


Popular Books


Comments

  • বিজয় লক্ষ্মী মুখার্জী

    খুব ভালো লাগলো, ছোটোদের ভালো লাগার গল্প

    Mar 4 2024
  • Sandip Kumar Panda

    বাঃ, সত্যি ভালো লাগলো পড়ে। ছোটগল্প আর ছোটদের জন্য গল্প দুইদিক থেকেই এই গল্পটি তার মান রেখেছে। পুরো গল্পের বাঁধন খুবই মুজবুত। সরল সরল ভাষায় লেখা ফলে ছোটদের পড়তে ভালো লাগবে। গল্পটি সরস হবার জন্য পড়তে বাধা হবে না। লেখিকার শব্দচয়ন সত্যি প্রশংসার দাবিদার। টেনিদার পর ইটু আর পাটুর দ্বারা 'ক্যান্ডাভ্যারিয়াস ' আর একটা নতুন শব্দ সৃষ্টি হল । তবে গল্পের প্রথম দিকের তুলনায় শেষ দিকে একটু হালকা হয়ে গেল। এন্ডিং আর একটু ভালো হবার দাবি রাখে। তবে যাই হোক গল্পটি পড়ে ৮ থেকে ৮০ সকলেই মজা পাবেন। রিভিউ:- সন্দীপ কুমার পণ্ডা

    Mar 4 2024
  • Ranu Sil

    ভালো লাগল। ছোটোদের মনস্তত্ত্ব ভীষণ ভালো ফুটেছে। লাল দুধ দেওয়ার ব্যাপারটা সুন্দর লাগল। শুভেচ্ছা।

    Mar 10 2024

Write a Comment